আরবী ভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

আরবী ভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য Al-Ilm Academy

আরবী পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবিত ভাষাগুলোর অন্যতম। গবেষকদের মাঝে এই ভাষার বয়স নিয়ে মতভেদ থাকলেও, আজ আমরা যে আরবী ব্যবহার করি, তা অন্তত এক হাজার ছয়শ বছরের পুরনো—এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ তা’আলা নিজেই এই ভাষার হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন, যেমন তিনি বলেন-
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
‘নিশ্চয়ই আমরাই এ যিকির (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই এর রক্ষক (হেফাযতকারী)’।

ইসলামের প্রারম্ভিক যুগ থেকেই আরবী সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত হয় এবং ইসলাম যতদূর পৌঁছেছে, আরবীও ততদূর পৌঁছেছে। এটি মুসলমানদের জীবনের অংশ হয়ে যায় এবং জ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি এবং সভ্যতার ভাষায় পরিণত হয়। ইবাদত ও দ্বীনের ভাষা হওয়া তো আছেই।

আরবী ভাষা বিভিন্ন সমকালীন সভ্যতা যেমন—আরব, ফারসি, গ্রিক ও ভারতীয় সভ্যতাকে আত্মস্থ করে একটি একক, বৈশ্বিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সভ্যতা গড়ে তুলতে পেরেছে; ইতিহাসে যা প্রথমবার ঘটেছিল। কুরআনের ছায়ায় আরবী একটি আন্তর্জাতিক ভাষায় পরিণত হয় এবং বহু দেশের মাতৃভাষা হয়ে ওঠে।

আরবী ভাষার গুরুত্ব একাধিক দিক থেকে উঠে আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর সাথে ইসলাম ও কুরআনের সাথে গভীর সম্পর্ক। আল্লাহ তা’আলা বিশ্বভাষাগুলোর মধ্যে থেকে এই ভাষাকেই নির্বাচিত করেছেন তাঁর মহাগ্রন্থ নাযিল করার জন্য এবং শেষবার্তাটি এই ভাষাতেই প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন-
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
‘নিশ্চয়ই আমি এটিকে আরবি কুরআন হিসেবে নাযিল করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো’।

এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বুঝতে পারি, ইসলাম ও আরবীর মাঝে কত গভীর সম্পর্ক। বহু আলেম এই সম্পর্কের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
‘এটি জানা বিষয় যে, আরবী শেখা ও শেখানো ফরযে কিফায়াহ’। তিনি আরও বলেন-
‘আরবী ভাষা দ্বীনের অংশ, আর এটি জানা ফরয। কারণ, কুরআন-সুন্নাহ বোঝা ফরয, আর তা আরবী ছাড়া সম্ভব নয়। আর কোনো ফরয কাজ, যদি তা অর্জনে অন্য কিছুর প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটিও ফরয হয়ে যায়।’

ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
‘মানুষ যখন আরবী ভাষা থেকে বিমুখ হলো, তখনই তারা জ্ঞানে দুর্বল হয়ে পড়ল এবং মতভেদে পড়ে গেল।’
আর হাসান বাসরী রাহিমাহুল্লাহ বিদআতিদের সম্পর্কে বলেন- ‘আর তাদের ধ্বংস করেছে আজমী হওয়া’।

আরবী ভাষার গুরুত্ব আরও এক জায়গায় প্রকাশ পায়। যেমন-এটি ইসলামী ও আরবি সংস্কৃতির চাবিকাঠি। এ ভাষা শেখার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি এমন একটি সভ্যতার দিগন্তে প্রবেশ করতে পারে, যে সভ্যতা শতাব্দীর পর শতাব্দী দুনিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছে এবং জ্ঞান, শিল্প ও বিজ্ঞান সহ বহু ক্ষেত্রে বিশাল এক ঐতিহ্য রেখে গেছে।

আরবীর গুরুত্ব এখানেও যে, এটি মুসলমানদের মাঝে একটি শক্তিশালী ঐক্যের বন্ধন হিসেবে কাজ করে। ভাষা হলো সমাজ ও জাতির একতার অন্যতম প্রধান উপাদান। ইতিহাসজুড়ে মুসলিম উম্মাহ সব সময় এই ভাষা শেখা ও শেখানোর ব্যাপারে আগ্রহী ছিল, এবং এখনও আছে। বর্তমানে আরবী শুধু আরবদের ভাষা নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ লক্ষ লক্ষ মুসলমান এই ভাষা শিখতে চায়, কারণ এটি তাদের দ্বীন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। শুধু মুসলমানরাই নয়, বরং অনেক অমুসলিমও আজ এই ভাষা শিখতে আগ্রহী। একদিকে ভাষাভাষীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য, অন্যদিকে ইসলামী ঐতিহ্য ও জ্ঞানভাণ্ডারের সাথে সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে।

আরবী ভাষা অ-আরবভাষীদের জন্য শেখানো একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। কারণ, একদিকে ভাষার চাহিদা অত্যন্ত বেশি, অন্যদিকে এই খাতে যথেষ্ট প্রচেষ্টা দেখা যায় না। বিভিন্ন সরকারি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু ভাষা শিক্ষার চাহিদার তুলনায় তা খুবই সামান্য। ফলে এই খাতে আরও অধিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে ‘আল-ইলম একাডেমী’ প্রতিষ্ঠান নিজেকে এই বরকতময় ভাষার খেদমতে নিবেদিত করার গৌরব অর্জন করেছে। ফালিল্লাহিল হামদ। এজন্য ‘লার্ন এরাবিক উইথ আল-ইলম টিম’ নামক প্রোগ্রাম চালু করেছে। মহান সর্বোচ্চ সফলতা দান করুন। আমীন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *