আরবী ভাষার গুরুত্ব ও শেখার ক্ষেত্রে সম্মুখীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায়সমূহ

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় Al-Ilm Academy

আরবী ভাষা তার সর্বপ্রথম গুরুত্ব অর্জন করেছে এই কারণে যে, এটি মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের ভাষা। এ ভাষাকেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বেছে নিয়েছেন কুরাইশ- কাফিরদের ওপর হুজ্জত প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হিসেবে। ফলে এটি হয়ে উঠেছে এক চিরন্তন মু’জিযা, যাতে রয়েছে অসীম বর্ণনাশক্তি ও গভীর অর্থবোধ।

আরবী ভাষা পৃথিবীর প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষাগুলোর অন্যতম। এতে বহু অর্থপূর্ণ শব্দ, পরিভাষা, চিত্রধর্মী প্রকাশভঙ্গি এবং ভাষার সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে। তবে বিশ্বের ভাষা ও জাতিসমূহের বৈচিত্র্যের কারণে এই ভাষা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো— আরবী ভাষাকে অবহেলা করা। এর স্থানে আঞ্চলিক ভাষা (আম্মিয়া)-এর ব্যবহার। কারো কারো পক্ষ থেকে আঞ্চলিক ভাষাকে ফুসহা (শুদ্ধ আরবী)-এর নিকটবর্তী করার প্রয়াস। কেউ কেউ তো আরবী ভাষাকে লাতিন হরফে লেখার আহ্বান জানায়।
অনেকেই লেখার সময় আরবী ব্যাকরণ ও ই’রাব (বাক্য গঠনের নিয়ম)-এর প্রতি অবহেলা করে।

এখানে আমরা আরবী ভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কিত কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করব। যেমন-
১. জাতিগত পরিচয় ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে: আরবী ভাষা আরব জাতির নিজস্ব পরিচয় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বিশ্বের অন্যান্য জাতির মাঝে তাদের মর্যাদা তুলে ধরে। কারণ, একটি জাতির ভাষার বিস্তার ও শক্তিমত্তার মাধ্যমেই সেই জাতির শক্তি পরিমাপ করা হয়। একটি ভাষা যত বেশি বিস্তৃত ও বেশি মানুষ দ্বারা চর্চিত হয়, সেই জাতির অবস্থান তত বেশি শক্তিশালী হয়।

২. বিভিন্ন শাস্ত্র শিক্ষা দেওয়ার মৌলিক মাধ্যম: আরবী ভাষা বহু শাস্ত্রের, বিশেষত ইসলামী জ্ঞানের মৌলিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কুরআন শিক্ষাদান, হাদীস, ফিকহ, ইসলামী বক্তৃতা, কবিতা ও সাহিত্য শেখাতে এই ভাষা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।

৩. দ্বীন সঠিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে: আরবী ভাষা ইসলামকে সঠিকভাবে বোঝার দ্বার উন্মোচন করে। এটি মানুষকে উচ্চতর মানসিকতায় পৌঁছে দেয় এবং কাউকে মধ্যস্থতা ছাড়াই নিজে নিজেই দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা অর্জন করতে সহায়তা করে।

৪. বিশ্বের অন্যান্য ভাষার গুরুত্বপূর্ণ উৎস: আরবী ভাষা বিশ্বব্যাপী অনেক ভাষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, অনেক বিদেশি ভাষা যেমন—তুর্কি, ফারসি ও কুর্দি ভাষায় আরবী শব্দ ও সংখ্যার ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

৫. অন্যান্য ভাষা জানার একটি মাধ্যম: অনুবাদ ও ভাষান্তরের মাধ্যমে আরবী ভাষা মানুষকে অন্যান্য ভাষা সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়। এর মাধ্যমে জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তৃত হয় এবং মানুষ বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতার সাথে পরিচিত হতে পারে।

আরবী ভাষার সম্মুখীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায়সমূহ

১. সমসাময়িক সময়গুলোতে বহু উদ্যোগ চালু হয়েছে—যেগুলো আরবী ভাষাকে সমর্থন, সংরক্ষণ এবং এর বিচ্ছিন্নতা ও বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করার জন্য কাজ করছে। ভাষাটিকে পূর্বের মতো শক্তিশালী ও সমুন্নত রাখার চেষ্টা চলছে। যদিও আরবী ভাষার জন্য ভয় বা শঙ্কার কোনো কারণ নেই, কেননা এটি কুরআনের ভাষা হওয়ায় এটি মানুষের হৃদয়ে সংরক্ষিত এবং এটি লাওহে মাহফূজ-এ সংরক্ষিত রয়েছে; তবুও সভ্যতাকে নবায়ন করা দরকার, ভাষার ইতিহাসকে পূর্ণতা দেওয়া জরুরি, নতুন সাহিত্যিকদের আবির্ভাব হওয়া দরকার, এবং কাব্য ও সাহিত্যের বইসমূহ রচিত হওয়া প্রয়োজন।

২. আরবী ভাষার দুর্বলতার পেছনের কারণগুলোর মোকাবেলায় শক্তভাবে ও দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ানো জরুরি। প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে তার প্রতিকার খোঁজা উচিত, যেন তা চূড়ান্তভাবে সমাধান করা যায়। সেইসাথে শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো রকম দুর্বলতা বা ঘাটতির সুযোগ রাখা উচিত নয়, কারণ পাঠ্যক্রমই শিক্ষার্থীদের মাঝে আরবী ভাষার প্রতি ভালোবাসার বীজ বপন করে।

৩. শিক্ষাক্রম উন্নত করতে হবে, যেন তা আধুনিক শিক্ষাদৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়বস্তু ও উদাহরণসমূহকেও আধুনিকভাবে উন্নত করতে হবে।

৪. প্রযুক্তিকে আরবী ভাষার সাথে একত্রিত করা দরকার, যাতে বর্তমান শিশু ও তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিল রেখে শিক্ষা আরও সহজ ও আনন্দদায়ক হয়।

৫. মৌখিক ও লিখিত যোগাযোগ দক্ষতার ওপর আলোকপাত করা জরুরি। ভাষাগত ও সাহিত্যিক ধারণাগুলোকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষাগত যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করা উচিত।

৬. চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কারণ চিন্তন ও বিশ্লেষণের দক্ষতা ভাষা অনুধাবন ও চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৭. আরবী ভাষার গুরুত্ব ও ইতিহাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি, এবং তরুণ প্রজন্মের মাঝে ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও আত্মিক সংযোগ গড়ে তুলতে হবে। তরুণ প্রজন্মের মনোযোগ আকর্ষণের অন্যতম উপায় হচ্ছে তাদেরকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা।

৮. পাঠ্যাভ্যাসের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদেরকে ভালো পাঠক ও মনোযোগী শ্রোতা বানাতে হবে, কারণ ভাষা একটি অর্জনযোগ্য বিষয়। একজন মানুষ হয়তো বিস্মিত হবে—তার বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার কেবলমাত্র ভালো শ্রোতা ও পাঠক হওয়ার মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন ছাড়াই। সেইসাথে আরবী ভাষার মর্যাদার দিকটিও সামনে তুলে ধরা জরুরি।

#Learn_Arabic_With_Al-Ilm_Team

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *