১. কিতাব (কুরআন) ও সুন্নাহ আরবী ভাষায় অবতীর্ণ: কুরআন নাযিল হয়েছে আরবদের ভাষায়। আল্লাহ تعالى বলেন- إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا
অর্থাৎ, আমি একে নাযিল করেছি আরবী কুরআনরূপে। নবী মুহাম্মাদ ﷺ ছিলেন আরব, এবং তিনি ছিলেন বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল আরবী ভাষার অধিকারী।
ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেন-
‘আল্লাহর কিতাব বোঝার সামগ্রিক জ্ঞানের অন্যতম মূলনীতি হলো— জানা যে, পুরো কুরআন নাযিল হয়েছে আরবী ভাষায়।’ তিনি আরও বলেন- ‘আরবীর মাধ্যমেই কিতাব নাযিল হয়েছে এবং সুন্নাহও এসেছে সেই ভাষায়।’
২. আল্লাহর কিতাবের বক্তব্য আরবী ভাষার কথার অর্থ ও কাঠামোর সাথে সম্পূর্ণ সাযুজ্যপূর্ণ: কুরআনে যেমন আছে সংক্ষিপ্ততা ও ইঙ্গিতপূর্ণ বাক্য, তেমনি আছে সাধারণ ও নির্দিষ্ট নির্দেশ— যা আরবী ভাষার বৈশিষ্ট্য। সুতরাং, কুরআনের বাহ্যিক অর্থ বুঝতে হলে আরবী ভাষার বাহ্যিক কাঠামো ও রীতিনীতি জানতে হবে।
৩. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর উদ্দেশ্য বোঝা আরবী ভাষা ও এর জ্ঞান নির্ভর: সুতরাং, প্রত্যেক মুসলমানের উচিত— সে পরিমাণ আরবী শেখা, যাতে সে নিজের দ্বীনকে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ইমাম শাফিই রাহিমাহুল্লাহ বলেন- ‘কেউ যদি আরবী ভাষার বিস্তৃতি, বহুমুখীতা, অর্থভেদের দিক ও আলাদা আলাদা অর্থের সমষ্টি না জানে, তাহলে সে কুরআনের সার্বিক বক্তব্য বুঝতে পারবে না। আর যে এই ভাষা জানবে, তার থেকে সন্দেহ-সংশয় দূর হয়ে যাবে— যা তাদেরকে ঘিরে রেখেছে যারা আরবী জানে না।’
তিনি আরও বলেন- ‘প্রত্যেক মুসলমানের উচিত, নিজের সাধ্য অনুযায়ী আরবী ভাষা শেখা— যেন সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাক্ষ্য দিতে পারে এবং কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে।’
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন- ‘যে আরবী ভাষায় আমাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে, সেই ভাষার জ্ঞান রাখা হলো আল্লাহ ও রাসূলের উদ্দেশ্য বুঝার অন্যতম সহায়ক উপায়।’
৪. আরবী ভাষার পূর্ণতা সাধারণ মুসলিম উম্মাহর মাঝে বিদ্যমান: একজন ব্যক্তি হয়তো আরবী ভাষার কোনো শব্দ জানে না বা কোনো বিষয়ে অজ্ঞ হতে পারে। কিন্তু গোটা উম্মাহর মাঝে সেই শব্দ বা বিষয়ের জ্ঞান অবশ্যই থাকে এবং সংরক্ষিত থাকে। এটা ঠিক যেমন নবী ﷺ এর হাদীস সম্পর্কে— কোনো হাদীস হয়তো কোনো এক আলেমের অজানা, কিন্তু তা উম্মাহর সব আলেমের পক্ষে অজানা থাকা অসম্ভব।
-এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আরবী ভাষা হলো ইসলামের মূল চাবিকাঠি। কুরআন, হাদীস, ফিকহ, এবং শরীআহর সঠিক উপলব্ধির জন্য আরবী ভাষা জানা অপরিহার্য। সেজন্যই সালাফগণ আরবী শেখাকে শুধু ভাষা শেখা হিসেবে দেখতেন না, বরং এটাকে দ্বীনের অংশ হিসেবে গণ্য করতেন।
সূত্র: মা’আলিমু উসূলিল ফিকহ ইন্দা আহলিস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ
লেখক: মুহাম্মাদ ইবন হুসাইন আল-জাইজানী, পৃষ্ঠা ৩৭০-৩৭১
#Learn_Arabic_With_Al-Ilm_Team