আরবী ভাষার গুরুত্ব সম্পর্কিত সালাফদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী

আরবী ভাষার গুরুত্ব সম্পর্কিত সালাফদের কিছু বাণী Al-Ilm Academy

আরবী আমাদের সম্মান ও ঐতিহ্যের ভাষা। আরবী হলো সেই ভাষা, যাকে মহান আল্লাহ নিজ অহির বাহক হিসেবে বেছে নিয়েছেন এবং তাঁর দ্বীন বোঝার মাধ্যম বানিয়েছেন। এই ভাষার খিদমাতে আলেমগণ তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা এই ভাষার অভিধান রচনা করেছেন, ব্যাকরণ লিপিবদ্ধ করেছেন, ইসলামী শরী’আহর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহ ব্যাখা করেছেন; যাতে আমাদের ভাষাটি যুগে যুগে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত থাকে।
এই ভাষাই আমাদের সম্মান, আমাদের সম্পদ এবং আমাদের ঐতিহ্য। এই উত্তরাধিকারকে আমাদের অবহেলা করা উচিত নয়। সুতরাং প্রত্যেককেই যথাযথভাবে সঠিক পদ্ধতিতে আরবী শেখা উচিত। নিম্নে আরবী ভাষা শিক্ষা সম্পর্কিত সালাফদের কিছু বাণী উল্লেখ করা হলো।

১. উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন-
‘তোমরা আরবী শেখো, কারণ এটি তোমাদের দ্বীনের অংশ। আর ফারায়েয শেখো, কারণ সেটাও তোমাদের দ্বীনের অংশ।’ —অর্থাৎ, ভাষা ও জ্ঞান দুটোই দ্বীনের ভিত্তি। সঠিকভাবে দ্বীন বুঝতে আরবী ভাষার জ্ঞান অপরিহার্য বিষয়।

২. উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আবু মুসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উদ্দেশ্যে চিঠিতে লিখেছিলেন-
‘অতঃপর (জেনে রাখো), সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করো এবং আরবী ভাষা শেখো। কুরআনের ই’রাব (তথা ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ) করো, কেননা এটি একটি আরবী কিতাব।’ এই নির্দেশনার মাধ্যমে উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দুটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। যথা-
প্রথমত: আরবী ভাষার ফিক্বহ (গভীর জ্ঞান) অর্জন।
দ্বিতীয়ত: শরীয়তের ফিক্বহ (ইসলামী বিধি-বিধানের গভীর জ্ঞান) অর্জন।
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ব্যাখ্যা করে বলেন- ‘কারণ দ্বীন হলো কথাবার্তা ও কাজের উপর গঠিত ও প্রতিষ্ঠিত। আরবী ভাষার জ্ঞান হলো কথাবার্তার ফিক্বহে পৌঁছার পথ, আর শরীয়তের ফিক্বহ হলো কাজের গন্তব্যে পৌঁছার পথ’।

৩. আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন-
‘আমি জানতাম না فَاطِرِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرض (তথা আসমান সমূহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা) এর অর্থ কী— যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি এক আরব নারীকে বলতে শুনলাম- ‘আমি এটি ফাতারতু করেছি’ অর্থাৎ, আমি এটি শুরু করেছি।’ তিনি আরও বলেন- ‘যদি কুরআনের কোনো কিছু তোমাদের জন্য অস্পষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তা আরবদের কবিতার মধ্যে খোঁজো, কেননা কবিতা হলো আরবদের শব্দভাণ্ডার’। —এতে বোঝা যায়, কুরআনের শব্দ বুঝতে আরবী ভাষা ও সাহিত্য, বিশেষতঃ আরবদের কবিতা জানাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন-
‘আমাকে যদি ফিক্বহের কোনো মাসআলা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, আমি তার উত্তর দেই নাহুর (ব্যাকরণ) মূলনীতি থেকেই’। —অর্থাৎ ইসলামী আইন ও বিধ-বিধানের জ্ঞান অর্জনেও আরবী ব্যাকরণ অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।

৫. বিখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিক আবু রাইহান আল-বীরুনি বলেন-
‘আরবীতে গালি খাওয়া, ফারসিতে প্রশংসা পাওয়ার চেয়ে উত্তম।’ —এর মাধ্যমে তিনি আরবী ভাষার মর্যাদা, শ্রেষ্ঠত্ব এবং আত্মিক মূল্যবোধের কথা প্রকাশ করেছেন।

উপসংহার: এই বাণীগুলোর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, সালাফে সালিহীনগণ আরবী ভাষার গুরুত্ব কতটা গভীরভাবে উপলব্ধি করতেন। দ্বীনের সঠিক জ্ঞান, কুরআনের ফিক্বহী জ্ঞান, সুন্নাহ বোঝা, এমনকি ইসলামী আইন এবং সংস্কৃতিসহ —সব কিছুর মূল চাবিকাঠি হলো এই মহান ভাষা। তাই একজন মুসলমানের জন্য আরবী ভাষা শেখা ও তার শুদ্ধ চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

#Learn_Arabic_With_AL-ILM_Team

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *