বই পড়ার বিভিন্ন ধরণ

বই পড়ার বিভিন্ন ধরণ

বই পড়ার বিভিন্ন ধরণ

📝অনুবাদ ও সম্পাদনা: আল-ইলম একাডেমী অনুবাদ টিম।

বই পড়া কখনো একতরফা বা একঘেয়েমি বিষয় নয়, বরং এটি এক ধরনের গতিশীল ও বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া, যা আমাদের মনের জগতকে উন্মোচন করতে সাহায্য করে। পাঠকের উদ্দেশ্য এবং বইয়ের ধরণ অনুযায়ী পড়ার পদ্ধতি এবং অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রতিটি ধরনের পড়া তার নিজস্ব ভূমিকা পালন করে এবং একটি নির্দিষ্ট পঠন-পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে বা লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হই। আসুন! বই পড়ার বিভিন্ন প্রকার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি। যথা-

প্রথমতঃ বিনোদনমূলক বা আনন্দমূলক পড়া-

এ ধরনের পড়া সে সব বইয়ের জন্য উপযুক্ত, যেগুলো আমাদের মানসিক প্রশান্তি ও আনন্দ দিয়ে থাকে। যেমন: গল্প, উপন্যাস বা কবিতা; যা আমাদের চিন্তা থেকে একধাপ এগিয়ে গিয়ে একটি ভিন্ন জগতে প্রবেশ করায়। এখানে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য থাকে না। শুধুমাত্র মনোরঞ্জন বা অবসর যাপনের জন্যই এটা পাঠ করা হয়। পাঠক যখন একটি সাহিত্যকর্মে ডুবে যায়, তখন তার মন সুখানুভূতি ও প্রশান্তির মধ্যে প্রবাহিত হয়; যা তাকে দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে।

দ্বিতীয়তঃ অন্বেষণমূলক বা অনুসন্ধানী পড়া-

এ ধরনের পড়ার দ্বারা পাঠক শুধুমাত্র সেই অংশগুলোই পড়ে, যা তার জন্য প্রাসঙ্গিক বা খুবই প্রয়োজনীয়। এটা মূলতঃ বইয়ের সারাংশ না পড়েই নির্দিষ্ট তথ্য বা বিষয় বের করার একটা কৌশল। বইটা যদি পাঠকের প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত হয়, তাহলে দ্রুততার সাথে তার চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়। এটা গবেষণা বা যে কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয় অনুসন্ধানের জন্য উপকারী, যেখানে মূলতঃ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ধারণা বা তথ্য বের করা হয়, যা পাঠকের অবস্থা বা প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

তৃতীয়তঃ ত্বরিতগতিতে বা দ্রুতগামী পড়া-

এক্ষেত্রে বই বা প্রবন্ধ সম্পূর্ণ পড়া হলেও, তা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে পড়া হয়। এ ধরনের পড়া মূলতঃ তথ্যভিত্তিক লেখাগুলোর জন্য উপযুক্ত, যেখানে গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে না। পত্রিকা, সংবাদ, দীর্ঘ প্রবন্ধ বা সাধারণ তথ্যসমৃদ্ধ বইগুলোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যেখানে পাঠক মূল তথ্যটি দ্রুত সংগ্রহ করেন। এটা যেমন পাঠককে সময়ের সাশ্রয়ে সাহায্য করে অনুরূপ পাঠককে বৃহত্তর প্রসঙ্গে দ্রুত মগ্ন হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

চতুর্থতঃ বিশ্লেষণমূলক পড়া-

এ ধরনের পড়া প্রতিটি শব্দ এবং বাক্যের মধ্যে লুকানো গভীর অর্থ খুঁজে বের করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাঠক এই প্রক্রিয়ায় বইয়ের প্রতিটি দিককে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করেন, যাতে তারা শুধুমাত্র তথ্যই না, বরং সেই তথ্যের অন্তর্নিহিত অর্থ ও প্রভাব উপলব্ধি করতে পারে। এটা সাধারণতঃ শিক্ষামূলক বই, গবেষণামূলক গ্রন্থ বা পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য কাজে লাগে। এ ধরনের পড়ার দ্বারা চিন্তাশক্তি এবং মননশীলতা উন্মুক্ত করে, যা পরবর্তীতে একজন পাঠককে নতুন জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।

পঞ্চমতঃ সমালোচনামূলক পড়া-

সমালোচনামূলক পড়া হচ্ছে একটি উচ্চস্তরের পাঠ পদ্ধতি, যেখানে বইটার গভীর বিশ্লেষণ করা হয়। এটা সাধারণতঃ অন্য কোনো ধরনের পড়া শেষে প্রয়োগ করা হয়, যাতে পাঠক বইয়ের বিষয়বস্তু, লেখার শৈলী এবং প্রয়োগের প্রতি একটি সমালোচনামূলক দৃষ্টি রাখতে পারে। পাঠক শুধুমাত্র লেখকের উদ্দেশ্য ও বর্ণনার ওপর ফোকাস করে না, বরং এটা পাঠকের নিজস্ব মানদণ্ডে বিচার করা হয়। একটা বইকে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে পড়ার মাধ্যমে পাঠক তার নিজস্ব চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিসরকে প্রসারিত করতে সক্ষম হয়।

শেষকথা- উল্লেখিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে, পড়া শুধুমাত্র এক ধরনের নয়, বরং এটা এক বহুস্তরিক কার্যক্রম, যার মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এবং বিভিন্ন লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়।

প্রিয় পাঠক! আপনাদের কাছে আমরা জানতে চাই – তো আপনারা কোন ধরনের পড়া বেশি উপভোগ করেন?

আরবী থেকে অনূদিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *