আসহাবুল কাহফ থেকে শিক্ষা

আসহাবুল কাহফ থেকে শিক্ষা

আব্দুর রহমান বিন নাসির আস-সা’দী (রহিমাহুল্লাহ)
অনুবাদ: সাব্বির রায়হান বিন আহসান হাবিব
[অধ্যয়নরত, কিং আব্দুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয় কো-অর্ডিনেটর, আল-ইলম একাডেমী]

১. আসহাবুল কাহফের ঘটনা আশ্চর্য ধরিয়ে দেবার মতো। কিন্তু এটা যে আল্লাহর সবচেয়ে বড়ো আশ্চর্যজনক নিদর্শন (আয়াত), বিষয়টি কিন্তু সেরকম নয়। আল্লাহ তাআলার এমন অসংখ্য আশ্চর্যজনক নিদর্শনাবলী ও ঘটনা রয়েছে যেগুলো বহু ইলাহী শিক্ষা-সম্বলিত।

২. আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলে তিনি হৃদ্যতা প্রদর্শনপূর্বক তাকে আশ্রয় দেন এবং পথহারাদের জন্য এটাকেই হিদায়াতের মাধ্যম হিসেবে নির্ধারণ করেন। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এই সুদীর্ঘ সময় ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে আগলে রেখেছিলেন। নিজ জাতির ফিৎনা থেকে তাদের ঈমান ও কায়া সুরক্ষিত ছিল। সুদীর্ঘ এই ঘুম ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে এক অসামান্য নিদর্শন যা তার কুদরতের পরিপূর্ণতা এবং বান্দার উপর নানারকম ইহসানের প্রমাণ বহন করে।

৩. আসহাবুল কাহফ-এর ঘটনায় উপকারী জ্ঞান অর্জন এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পারস্পরিক আলোচনা করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ ﷻ তাদেরকে এই উদ্দেশ্যেই পাঠিয়েছিলেন। তাদের জ্ঞান অন্বেষণ, অতঃপর তাদের সম্পর্কে মানুষের অবহিত হওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কিয়ামত অত্যাসন্ন, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

৪. যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়, তবে যিনি সেই বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখেন তার কাছে যেতে হবে। (আদব)

৫. ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করা এবং অংশীদার হওয়া জায়েয।

৬. উত্তম খাবার খাওয়া এবং ব্যক্তির রুচিসম্মত খাবার পছন্দ করা জায়েয। তবে সেক্ষেত্রে যাতে অপচয় না হয় সেটাও লক্ষণীয়।

৭. যেসকল স্থানে দ্বীনের মাঝে ফিৎনা সৃষ্টি করা হয় সেখান থেকে দূরে থাকা এবং নিজেকে আড়ালে রাখা যায়। আর নিজেকে অনিষ্ট থেকে বাঁচানোর জন্য গোপন স্থান ব্যবহার করার যায়।

৮. দ্বীনের প্রতি কতক যুবকের উৎসাহ, দ্বীন-সংক্রান্ত সকল ধরণের ফিৎনা থেকে পলায়ন এবং এক আল্লাহর জন্য নিজেদের দেশ ও সংস্কৃতি পরিত্যাগ করার বিষয়টি এই ঘটনায় উঠে এসেছে।

৯. যেকোন অকল্যাণকর বিষয়ের মাঝে এমন অসংখ্য ক্ষতিকর ও নেতিবাচক বিষয় রয়েছে যেগুলো অকল্যাণকে ঘৃণা করতঃ তা বর্জন করার প্রতি উৎসাহ জোগায়। আর এটাই মুমিনের পথ।

১০. আসহাবুল কাহফ ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নিজেদেরকে যেই জাতির মাঝে আবিষ্কার করলো তারা ছিল খুব দ্বীনদার। গুহার এই মানুষগুলোকে তারা এতটাই সম্মান করেছিল যে, একপর্যায়ে তাদের গুহার উপর মসজিদ (সাজদার স্থান) বানানোর উপক্রম হয়েছিল। যদিও এটা নিষিদ্ধ; বিশেষতঃ আমাদের শরীয়তে। এখানে আসলে এটা বলা উদ্দেশ্য যে, আসহাবুল কাহফ নিজেদের ঈমান নিয়ে ইতিপূর্বে যেই আতংকের মাঝে ছিল, আল্লাহ তা‘আলা সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদেরকে নিরাপদে রেখেছিলেন এবং সৃষ্টিকুলের মাঝে তাদেরকে করেছিলেন সম্মানিত। যারা একমাত্র আল্লাহর জন্য কষ্ট স্বীকার করে তাদের প্রতিদান এমনই হয়।

১১. যে সকল বিষয়ে প্রশ্ন করার মাঝে কোনো উপকারিতা নেই সেগুলো নিয়ে দীর্ঘক্ষণ নিমগ্ন থাকা উচিত নয়।

১২. উদ্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে যার জ্ঞান নেই অথবা যিনি নির্ভরযোগ্য নয় তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা নিষিদ্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *